করোনাভাইরাস: চা ও ভেষজ ওষুধ এর মাধ্যমে কিভাবে ভাইরাস ঠেকাতে হয় সেই তথ্যের বাস্তবতা কি সত্যিই আছে?

ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাস সম্পর্কে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য। ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের আরোপ করা বিধিনিষেধের মধ্যেই এই ঘটনার জন্ম নেয়। এ খবর গণমাধ্যম থেকে ছড়িয়ে বাহিরে ও ছড়াচ্ছে ।

এরকম কিছু উদাহরণের উপর নজর দিয়ে সেগুলো যাচাই করে দেখেছেন-বিবিসির রিয়েলিটি চেক বিভাগ


ভূয়া খবরে কান দিবেন না
  



করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভেষজ

মি. মোদি বলেছেন, জনগণের উচিত বিশেষ একটি ভেষজ ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করা। এর নাম কাধা।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে যেসব কৌশল গ্রহণ করেছেন তার একটি হচ্ছে লোকজনকে বহু বহু বছর ধরে প্রচলিত বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।

তিনি বলেছেন কাধা তৈরিতে যে পথ্যগুলোর সাহায্য নিতে তা নিম্নরুপ : 

শুকনো আদা, দারুচিনি, তুলসি পাতা,  গোল মরিচ, কিশমিশ ইত্যাদি একসাথে মিশিয়ে খুব সহজেই এটি তৈরি করে সেবন করা যায়।

সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া খবরে দাবি করা হচ্ছে যে করোনাভাইরাস ঠেকাতে ভেষজ ওষুধ

শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অকেকাংশেই বৃদ্ধি করে দেয়। 

কিন্তু চিকিৎসা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনাভাইরাস শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে করতে পারে এ বিষয়ে কোন সঠিক প্রমাণ তাদের কাছে নেই।

আকিকো ইওয়াসাকি, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইমিওনোলজিস্ট বলেন এই দাবির পেছনে বৈজ্ঞানিক বিন্দমাত্র ভিত্তি নেই।

ভারতে আয়ুর্বেদী, ইয়োগা এন্ড ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানী, সিদ্ধা এন্ড হোমিওপ্যাথি মন্ত্রণালয় এধরনের প্রচলিত ভেষজ চিকিৎসার ব্যাপারে জনগণক উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। এসব চিকিৎসা পদ্ধতির তালিকা তুলে ধরে তারা দাবি করছে যে এগুলো মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

করোনা ভাইরাসে ভেষজ এর কোন কার্যকর কোন সত্যতা বা প্রমাণ নেই ।

ভারতীয় সরকারের একিটি বিভাগ ভুয়া সংবাদের সত্যতা যাচাই করে সেগুলোর অসারতা তুলে ধরেছে। 

এবং তারা করোনা প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেষনা দিয়ে যাচ্ছেন এরকম দাবির মধ্যে ছিল যে গরম পানি পান করলে অথবা ভিনিগার ও লবণ মেশানো পানি দিয়ে গড়গড়া করলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

তারা আরো বলেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা। 

ভুয়া তথ্য

জনপ্রিয় একটি হিন্দি টিভি চ্যানেল এবিপি নিউজ রিপোর্ট করেছে যে সারাদেশে লকডাউন জারি করা না হলে ভারতে ১৫ই এপ্রিলের মধ্যে প্রায় আট লাখের ও বেশী মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতো বলে আশা করা হয়।

চিকিৎসা সংক্রান্ত শীর্ষস্থানীয় একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ বা আইসিএমআরের বরাত দিয়ে টিভি চ্যানেলটি এই রিপোর্ট প্রচার করে।

ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান অমিত মালভিয়া এই রিপোর্টটি টুইট করেন। তার টুেইট ‍এ হাজারও্র মানুষ মতামত পেশ করেন। এ টুইট ‍এ উৎসাহিত হয়ে আরে একে একে শেয়ার করে থাকে অন্যরাও।

কিন্তু ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায় অন্য কথা, তারা বলে এধরনের কোন গবেষণাই হয়নি। একই কথা বলেছে-আইসিএমআরও ।

সংস্থাটির গবেষণা শাখার আঞ্চলিক প্রধান ড. রজনীকান্ত বিবিসিকে বলেছেন, “আইসিএমআর কখনো এমন গবেষণা করেনি যাতে এধরনের প্রভাবের কথা বলা হয়েছে।”

কিন্তু তা সত্ত্বেও এবিপি নিউজ তাদের এই খবরটি প্রত্যাহার করেনি।

তবে মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে সংক্রমণের সংখ্যা কতো হতে পারে সেবিষয়ে তারা কিছু “অভ্যন্তরীণ গবেষণা” চালিয়েছে কিন্তু সেগুলো কখনো প্রকাশ করা হয়নি।

লকডাউন না হলে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা কতো হতো সেটা জানা সম্ভব নয়। ভারতে ২৫শে মার্চ থেকেই লোকজনের চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।

Coronavirus: What is social-distancing, self-isolation, quarantine ...
একটি ভূয়া খবরই আপনার জীবনকে বিপদে ফেলে দিতে পারে।

 

চা পান করোনা প্রতিরোধে সক্ষম

বেশি বেশি চা খেলে করোনাভাইরাস ঠেকানো যায় ভারতে ছড়িয়ে পড়া এরকম একটি খবর এখন ভারত যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ।

এই গুজবের উৎপত্তি চীনে দাবি অনেকের ই।

ভুয়া পোস্টের স্লোগান ছিল: “এক কাপ চা যে করোনাভাইরাসের সমাধান এটা কে জানতো।”

এই ভুয়া দাবিটি সোশাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। তাতে জড়ানো হয়েছিল চীনা ডাক্তার লী ওয়েনিলিয়াং-কে

এই ভাইরাসের ব্যাপারে তিনিই প্রথম উহান শহরে সবাইকে সতর্ক করেছিলেন এবং পরে তিনি নিজের প্রাণ দিতে হয়েছিল এই করোনাভাইরাসই।

ডাক্তার লী চায়ের মধ্যে এমন একটি উপাদান মেথিলজেনথিন্স পেয়েছেন যা ভাইরাসের প্রভাব কমাতে পারে বলে ও ওই পোস্টে দাবি করা হয় যে

ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ওই পোস্টে দাবি করা হয় যে চীনে কোভিড-১৯ রোগীদের বাধ্যতামূলক ভাবে দিনে তিন বেলা চা খেতে দেওয়া হতো।

চা, কফি ‍ও চকোলেটের মধ্যে মেথিলজেনথিন্স আছে এটা অবশ্য সত্য।

তিনি ভাইরাসের বিশেষজ্ঞ ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ।
 
কিন্তু বলা হয়েছে ডাক্তার লী  নাকি যে এই বিষয়ে  গবেষণা করেছেন । তবে তার কোন প্রমাণ নেই।

আরো জানা যায় যে, 
চীনে কোভিড-১৯ রোগীদের চা খাইয়েও চিকিৎসা করা হয়নি।




 

 

 

Post a Comment

0 Comments