ডিসেম্বর ১, ১৯৭১ : মুক্তিযুদ্ধাদের সর্বাত্মক আক্রমণ

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : জানা অজানা তথ্য
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পদে পদে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মার খেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার মিলে মোট ৩০ জন নিহত হয় সিলেটের কানাইঘাটে। জুড়ী, বড়লেখা এলাকা থেকে হানাদার বাহিনীর কামান সরিয়ে নিতে বাধ্য হই। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকসেনারা বিপুল ক্ষতির শিকার হয়ে অবশেষে কুলাউড়া থেকে পালিয়ে যায়। 

এদিন কুষ্টিয়ার দর্শনা ও সিলেটের শমসের নগরে আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী। কুষ্টিয়ার কাছে মুন্সীগঞ্জ ও আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের মধ্যে মুক্তিসেনারা মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাক সৈন্যবাহী ট্রেন বিধ্বস্ত করে। এতে বহু পাকসেনা হতাহত হয়। সিলেটের ছাতক শহরে মুক্তিবাহিনী ও পাক সেনাদের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। এবং ৬৫ জন রাজাকার নিহত হয়। 

মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ মুক্ত করে মুক্তিবাহিনী সামনে এগিয়ে যায়। কুমিল্লার কসবা রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৬০ জনের বেশি পাক সেনা নিহত হয়। কুষ্টিয়ার দর্শনা ও সিলেটের শমসের দখল লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে। 

এদিন রাতে কর্নেল শফিউল্লাহ, দ্বিতীয় বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর মইন, ১১ বেঙ্গল কমান্ডিং অফিসার মেজর নাসিম এর নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী ও বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেরানী, সিঙ্গারাইল, গৈরামসানি, আজমপুর ও রাজাপুর শত্রুমুক্ত করে। যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধাে ইয়াসিন খাঁ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শহীদ হন। আর এই সময় পাকসেনা নিহত হয় ২৩ জন। 

সাতক্ষীরা মহকুমার কালিগঞ্জ পাকবাহিনী মুক্ত হওয়ায় বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান, তোফায়েল আহমেদ এম এন এ, শ্রী ফণি মজুমদার, অর্থ সচিব এ জামান, আইজি এম এ খালেক কালীগঞ্জে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। 

এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী পশ্চিম ফ্রন্টে আক্রমণাত্মক ও পূর্ব ফ্রন্টে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশকে হানাদার বাহিনী মুক্ত করার দীর্ঘ পরিকল্পনা নেই। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী রাজ্যসভায় বক্তৃতাকালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের সৈন্য অপসারণের নির্দেশ দেওয়ার জন্য পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান ।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় রংপুর, সিলেট, খুলনা, দিনাজপুর, ও যশোর রাজশাহী জেলার ৬২ টি থানা এবং নোয়াখালী জেলার চর এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments